৮২৷ (১) যে ক্ষেত্রে দ্বিতীয় তফসিলে উল্লিখিত ব্যাধি দ্বারা কোন প্রতিষ্ঠানে কোন শ্রমিক আক্রান্ত হন, সে ক্ষেত্রে মালিক অথবা সংশ্লিষ্ট শ্রমিক অথবা তত্কর্তৃক নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তি, বিধি দ্বারা নির্ধারিত ফরমে ও সময়ের মধ্যে, তত্সম্পর্কে পরিদর্শককে নোটিশ মারফত অবহিত করিবেন৷

(২) যদি কোন রেজিস্টার্ড চিকিৎসক কোন প্রতিষ্ঠানের বর্তমান বা ভূতপূর্ব কোন শ্রমিককে চিকিৎসাকালে দেখেন যে, তিনি দ্বিতীয় তফসিলে উল্লিখিত কোন ব্যাধিতে ভুগিতেছেন বা ভুগিতেছেন বলিয়া তাহার সন্দেহ হইতেছে, তাহা হইলে উক্ত চিকিৎসক অবিলম্বে একটি লিখিত রিপোর্ট মারফত প্রধান পরিদর্শককে নিম্নলিখিত বিষয় অবহিত করিবেন, যথাঃ-

(ক) রোগীর নাম এবং ডাক যোগাযোগের ঠিকানা;

(খ) রোগী যে রোগে ভুগিতেছেন বা ভুগিতেছেন বলিয়া সন্দেহ হইতেছে, তাহার নাম;

(গ) যে প্রতিষ্ঠানে রোগী বর্তমানে কাজ করিতেছেন বা সর্বশেষ কাজ করিয়াছেন, তাহার নাম ও ঠিকানা৷

[ (২ক) প্রধান পরিদর্শক কর্তৃক নির্ধারিত সংশ্লিষ্ট মালিক উক্তরূপ পেশাগত ব্যাধিতে আক্রান্ত, ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমিকের চিকিৎসার ব্যবস্থা করিবেন।]

(৩) সরকার, সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, দ্বিতীয় তফসিলে কোন নূতন রোগ সংযোজন করিতে পারিবে অথবা উহা হইতে কোন রোগ বাদ দিতে পারিবে৷

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

নিচে সংক্রামক কিছূ রোগের নাম উল্লেখ করা হলো-

• কৃমি রোগ
• ম্যালেরিয়া
• কালাজ্বর
• টাইফয়েড জ্বর
• চিকেন পক্স বা জল বসন্ত
• ফাইলেরিয়া
• ডেঙ্গু

কৃমিরোগ

কৃমি আমাদের দেশে একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা। যে কোনো বয়সের মানুষের কৃমি হতে পারে। তবে শিশু কিশোরদের মাঝে কৃমির সংক্রমণ বেশি দেখা যায়৷ অবশ্য ছোট শিশু যেমন : পাঁচ মাস বয়স পর্যন্ত, যখন শুধু মাত্র মায়ের বুকের দুধই পান করে, তখন সাধারণত কৃমি হয় না৷ আমাদের দেশের মানুষের সুতা কৃমি, কেঁচো ও হুক কৃমির সংক্রমণ বেশি হলেও ফিতা কৃমির সংক্রমণ ও দেখা যায়৷
কৃমি
কৃমি হচ্ছে মানুষের সবচেয়ে ক্ষতিকর ও বৃহৎ পরজীবী। এটি মানুষের দেহে বাস করে এবং শরীর থেকে খাবার গ্রহণ করে বেঁচে থাকে ও বংশ বৃদ্ধি করে৷ কৃমি অনেক ধরনের আছে৷ তবে আমাদের দেশে কেঁচো কৃমি, বক্র কৃমি ও সুতা কৃমিতে আক্রান্তের হার বেশি৷

চিকিৎসা
কৃমির চিকিৎসা দেবার আগে মল পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া ভালো৷ যদি রোগীর মলে বা বমির সঙ্গে কেঁচো কৃমি বের হয়, রোগী যদি বলে যে রাতে তার মল দ্বার চুলকায়, মল পরীক্ষার সুযোগ ও সামর্থ্যের অভাব, কিন্তু কৃমি আছে বলে সন্দেহ হয় তবে মল পরীক্ষা না করেও কৃমির ঔষধ দেওয়া যায়৷ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বয়স অনুযায়ী আলাদা আলাদা মাত্রায় ঔষধ খেতে হবে৷
কারো কারো কৃমির ঔষধ খাওয়া সম্পূর্ণ নিষেধ, যেমন গর্ভবতী মহিলা, জ্বর ও ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী৷
প্রতিরোধ
• যেহেতু প্রতিরোধ চিকিৎসা অপেক্ষা অধিকতর ভালো তাই প্রতিরোধে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া উচিৎ
• জন্মের পর প্রথম ৫ মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে শুধু বুকের দুধ খাওয়াতে হবে
• মল নিষ্কাশনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা করতে হবে
• খাবার তৈরি, পরিবেশন এবং খাওয়ার পূর্বে সাবান দিয়ে অবশ্যই হাত ধুয়ে ফেলতে হবে
• মল ত্যাগের পর সাবান বা ছাই দিয়ে অবশ্যই হাত ধুয়ে ফেলতে হবে
• নিয়মিত গোসল করা, পরিষ্কার জামা-কাপড় পড়া এবং নখ বড় হবার আগেই অবশ্যই কেটে ফেলা কারণ বড় নখের ভেতর কৃমির ডিম ঢুকে থাকে
• প্রতি চার মাস পর পর পরিবারের সকলকে বয়স অনুযায়ী নির্দিষ্ট মাত্রার কৃমির ঔষধ খাওয়ানো উচিৎ
• বাড়ির একজনের কৃমি থাকলে সকলেরই সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে বাড়ির সবাইকে কৃমির ঔষধ খেতে হবে, বাড়ির কাজের মানুষটিও যেন বাদ না পরে।

ম্যালেরিয়া

স্ত্রী জাতীয় এনোফিলিস মশার কামড়ে ছড়ায় এমন এক ধরনের সংক্রামক জ্বর হলো ম্যালেরিয়া৷ ম্যালেরিয়া রোগের জীবাণু (প্লাসমোডিয়াম) মশার মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে অন্যের কাছে ছড়াতে পারে।
ম্যালেরিয়া রোগের লক্ষণ
রোগের লক্ষণের ধরন অনুসারে ম্যালেরিয়া কে সাধারণ/ জটিলতা বিহীন ম্যালেরিয়া ও মারাত্মক ম্যালেরিয়া হিসেবে চিহ্নিত করা যায়৷
সাধারণ/জটিলতা বিহীন ম্যালেরিয়ার লক্ষণ : ম্যালেরিয়া জ্বর থেকে থেকে নির্দিষ্ট সময়ে আসে৷ শীতকরে, কাপুনি দেয়৷ গায়ে প্রচন্ড ব্যথা হয়৷ এছাড়া হজমের গোলযোগ দেখা যায়। শরীর দুর্বল অনুভূত হয়। ক্লান্তি লাগে। এ সময়ে খিদে কমে যায়৷ তাই এ সময় রোগীকে হালকা ধরনের খাদ্যই দিতে হয়৷ বিশেষ করে তরল খাদ্য৷ শক্ত বা গুরুপাক খাদ্য বর্জন করা উচিৎ৷
মারাত্মক ম্যালেরিয়ার লক্ষণ
ম্যালেরিয়া রোগের জটিল ধরন হলো মারাত্মক ম্যালেরিয়া। জরুরী চিকিৎসা না পেলে এসব রোগীর মৃত্যু হতে পারে৷ সেরিব্রাল ম্যালেরিয়া (মারাত্মক ম্যালেরিয়া) রক্ত শূণ্যতা, কিডনি বৈকল্য, শ্বাস কষ্ট হওয়া, জন্ডিস, খিঁচুনি, রক্তে গ্লুকোজ কমে যাওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পায়৷ এক্ষেত্রে রোগী নিজে বসতে দাঁড়াতে কিংবা হাঁটতে পারে না, বারবার বমি হয়৷ রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে, এমন কি মৃত্যুও হতে পারে৷

ম্যালেরিয়া রোগের চিকিৎসা
সাধারণ/জটিলতা বিহীন ম্যালেরিয়া চিকিৎসায় আগে মুখে খাওয়ার ঔষুধ ক্লোরো কুইন ব্যবহার করা হতো৷ ক্রমে এর কার্যকারিতা কমে যাওয়ায় বর্তমানে অন্যান্য বিভিন্ন ঔষধ ব্যবহার করা হয়৷ যার মধ্যে বাংলাদেশে কো-আর্টেম ব্যবহার করার নিয়ম সম্প্রতি চালু হয়েছে৷ যদিও ভাইভেক্স ম্যালেরিয়ায় এখনো ক্লোরো কুইন কার্যকর ঔষুধ হিসেবে বাংলাদেশে স্বীকৃত৷ সেরিব্রাল ম্যালেরিয়ার (মারাতœক ম্যালেরিয়া)-রোগীকে মুখে খাওয়ার ঔষধ দিয়ে চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়৷ ফলে এদের দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করেই নজেকশনের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হয়৷ এখনো কুইনাইন ইনজেকশন স্যালাইনের মাধ্যমে প্রদান করাই হচ্ছে মারাত্ম কম্যালেরিয়ার মূল চিকিৎসা৷এ ধরনের রোগীর প্রয়োজনীয় নার্সিং খুবই গুরুত্ব পূর্ণ৷
ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ
ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের পদ্ধতি গুলো হচ্ছে কীটনাশকে ডুবানো মশারি ব্যবহার করা এবং মশার কামড় থেকে রক্ষা পাওয়ার বিভিন্ন উপায় গ্রহন করা৷ মশার বংশ বৃদ্ধি রোধে বিভিন্ন মুখী সমন্বিত পদ্ধতি ব্যবহার করা৷ যেমন -
• বাড়ির বাইরে গাছের টব ও জলাধার গুলো শুকনো, পানি শূন্য রাখতে হবে৷ যেসব জিনিসে বৃষ্টির পানি জমা হয়, যেমন- পুরনো টায়ার, ডাবের খোসা ইত্যাদি বাসার আশে পাশে না ফেলে ডাস্টবিনে ফেলে দিবেন
• টবে যেন পানি জমে না থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রাখুন
• ফ্রিজের নিচের ট্রেতে যেন পানি জমে না থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রাখুন
• ফুল দানিতে যেন পানি জমে না থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রাখুন
• জন স্বাস্থ্য কর্মীরা যাতে স্থির জলাধার, জলাবদ্ধ এলাকা নিয়মিত পরিষ্কার করে সে ব্যাপারে পাড়ার সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে।
মশার কামড় থেকে রক্ষা পেতে -
• জানালা-দরজায় নেট এবং খাটে মশারি ব্যবহার করুন৷
• মশা তাড়াবার জন্য মশার কয়েল, ভেপরম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
সর্বোপরি দ্রুত রোগ নির্ণয় করে কার্যকর চিকিৎসা দেওয়া। ম্যালেরিয়া জটিল হয়ে ওঠার আগেই লক্ষণ দেখা মাত্র হাসাপাতালে নিয়ে আসতে হবে।

চিকেনপক্স বা জলবসন্ত

জলবসন্ত ছোট-বড় সবাইকে আক্রমণ করে৷ এক সপ্তাহ বা তার বেশি সময় প্রায় একটানা এই অস্বস্তিকর অবস্থা থাকে৷ প্রথমে সামান্য জ্বর হতে পারে, এর পর ফোস্কা পড়ে, চুলকানি হয় এবং অবশেষে ফোস্কা থেকে শুকনো মরা চামড়া উঠে আসে৷ খুব কমক্ষেত্রেই জল বসন্ত মারাত্মক রোগ হিসাবে দেখা দিতে পারে৷ এই অস্বস্তিকর রোগের ব্যাপারে একটা সান্তনা রয়েছে,সেটাহলো-আপনার একবার জল বসন্ত হয়ে গেলে, সেটা সারা জীবনের জন্য বিদায় নেয়৷ কারো জলবসন্ত হলে আপনি নিচের ব্যবস্থা গুলো গ্রহণ করুন-
• ব্যথা নাশক ওষুধ দিন যদি জ্বরের কারণে আপনি অস্বস্তিবোধ করেন, তাহলে প্যারাসিটামল খান৷ যদি আপনার শিশুর বয়স দু বছরের কম হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন৷
• হালকা পোশাক পরুন । জলবসন্তে আক্রান্ত হবার পর রোগীর ত্বক যত বেশি ঠান্ডা রাখতে পারবেন, রোগী তত কম অস্বস্তিবোধ করবে৷ রোগীকে এক গাদা কাপড় চোপড়ে না জড়িয়ে তাকে হালকা সুতির কাপড় কিংবা পায়জামা পরান৷ কারণ এটা ত্বকে কম জ্বালা পোড়া সৃষ্টি করে৷
• রোগীর শরীর ঠান্ডা করুন রোগীর শরীরের তাপমাত্রা কমানোর জন্য একটা ঠান্ডা ভেজা কাপড় দিয়ে ত্বক মুছে দিতে পারেন কিংবা ঠান্ডা পানিতে গোসল করাতে পারেন৷ এতে রোগী আরাম বোধ করবে৷ তবে খেয়াল রাখবেন পানি যেন বেশি ঠান্ডা না হয়৷
• রোগীকে সজীব এবং পরিষ্কার রাখুন জলবসন্তের রোগীকে প্রতিদিন গোসল করিয়ে পরিষ্কার রাখতে হবে৷ এটা তার সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে৷ রাতে ঘুমানোর সময় রোগীর সারাদিন পরে থাকা জামা কাপড় পাল্টে তাকে পরিষ্কার কাপড় পরাতে হবে৷ পরিষ্কার পোশাক তাকে কেবল স্বস্তিই দেয়না, এটা তার সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে ও সাহায্য করে৷
• চুলকানি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করুন রোগীকে বুঝিয়ে বলুন সে যেন তার শরীর চুলকানোর চেষ্টা না করে,কারণ চুলকানোর ফলে তার সংক্রমণ হতে পারে এবং ত্বকে স্থায়ী দাগ পড়ে যেতে পারে৷ কিন্তু রোগী প্রবল চুলকানি কে সবসময় পুরোপুরি উপেক্ষা করতে পারবে না,তাই তাকে একটা ঠান্ডা, ভেজা নরম কাপড় দিন, যাতে সে এটা দিয়ে আস্তে আস্তে ঘষতে পারে৷ আর এটা তার ফোস্কা না ফাটিয়ে ত্বক অক্ষুন্ন রাখতে সাহায্য করবে৷
• চুলকানি নিয়ন্ত্রণের জন্য অ্যান্টিহিস্টামিন ব্যবহার করুন মুখে অ্যান্টিহিস্টামিন খাওয়ালে তা চুলকানি কমাতে সাহায্য করে৷কিন্তু যদি এতে চুলকানি না কমে, অন্তত এটা আপনার রোগীকে ঘুমিয়ে পড়তে সাহায্য করবে, যার ফলে সে কিছুটা বিশ্রাম নিতে পারবে৷
• নখ ছোট করে কেটে দিন আপনার শিশু জলবসন্তে আক্রান্ত হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তার আঙুলের নখ ছোট করে কেটে দিন৷ এমন কি অসুখ সেরে যাবার পরও কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত তার নখ প্রতি সপ্তাহে দুবার কেটে দেবেন৷ কারণ নখ বড় থাকলে সে নখ দিয়ে চুলকাবে এবং এতে চুলকানো স্থানে ব্যাকটেরিয়া জনিত সংক্রমণ হতে পারে এবং স্থায়ীভাবে দাগ পড়ে যেতে পারে৷
• অ্যান্টিবায়োটিক সহকারে চিকিৎসা করুন যদি ত্বকে সংক্রমণের চিহ্ন দেখাদেয়, যেমন পক্সের চারপাশে লাল হওয়া কিংবা পক্সের মুখে পুঁজ হওয়া, তাহলে ওই স্থানে অ্যান্টিবায়োটিক মলম মেখে দিন৷ সংক্রমিত জলবসন্তের সংখ্যা যদি অনেক বেশি হয় তাহলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন৷
• রোগীকে সূর্যালোক থেকে দূরে রাখুন যার জলবসন্ত হয়েছে কিংবা সম্প্রতি জলবসন্ত থেকে সেরে উঠেছে এদের সবাইকে সূর্যালোকের ব্যাপারে অতিরিক্ত সতর্কতা নিতে হবে৷ একবার জলবসন্ত হবার পর ত্বক প্রায় একবছর পর্যন্ত অরক্ষিত থাকে, এবং সূর্যালোকে সহজে পুড়ে যায়৷ তাই সম্প্রতি জলবসন্ত থেকে সেরে উঠেছে এমন রোগী যখন ঘরের বাইরে সরাসরি রোদের মধ্যে যাবে তার সমস্ত শরীরে ভালকরে সানস্ক্রিন মেখে দিতে হবে৷
কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন?
প্রথমিক পর্যায়ে
• তীব্র এবং ঘনঘন কাপুনি দিয়ে জ্বর আসে এবং এমনিতেই সেরে যায়
• লসিকা গ্রন্থিব্যথা, লাল এবং লসিকা নালী ফুলে যায়৷ কুচকির কাছের লসিকা গ্রন্থির নালী বেশি আক্রান্ত হয়
• অন্ডকোষ ফুলেযায় এবং ব্যথা হয়
• মারাত্মক পর্যায়ে শরীরের যে সকল জায়গা আক্রান্ত হয় সে সকল স্থান ফুলে যায় এবং মোটা হতে থাকে। আক্রান্ত জায়গা গুলো শক্ত হয়ে যায়, চাপ দিলে বসে যায়না। হাঁটুর নিচের অংশে বেশি দেখা যায়
• লসিকাগ্রন্থি ফেটে যাওয়ার কারণে দুধের মতো সাদা লসিকা রস প্রস্রাবের সঙ্গে বের হয়ে যায়৷
• অন্ডকোষের মধ্যে পানি জমে যায়
• অন্ডকোষে প্রদাহ হয়
চিকিৎসা : লক্ষণগুলো দেখাদিলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
প্রতিরোধ
• সবাইকে অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে
• বাড়ির আশপাশের যে সকল জায়গায় ময়লা পানি জমতে পারে সে সকল জায়গা ভরাট করে ফেলতে হবে
• বাড়ির আশেপাশের ঝোপঝাড় পরিষ্কার করতে হবে যাতে মশা বসবাস করতে না পারে
• নিয়মিত কীটনাশক ছড়িয়ে বাড়ির আশপাশ মশামুক্ত রাখতে হবে।

ডেঙ্গু জ্বর

ডেঙ্গু ভাইরাস জনিত রোগ৷ এটা এডিস মশা দ্বারা ডেঙ্গু রোগীর থেকে সুস্থ মানুষের দেহে সংক্রমিত হয়৷ এডিস মশা দেখতে গাঢ় নীলাভ কালো রঙের, মশার সমস্ত শরীরে আছে সাদাসাদা ডোরাকাটা দাগ৷এডিস মশা সাধারণত দিনের বেলায় কামড়ায়৷ বেশিরভাগ ডেঙ্গু হয় বর্ষার সময়৷ এই ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশের পর ৩ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায়৷
ডেঙ্গু সাধারণত দুই ধরনের হতে পারে -
• ক্লাসিক্যাল জ্বর এবং
• হেমোরেজিক জ্বর

ক্লাসিক্যাল জ্বর
লক্ষণ
• তীব্র জ্বরের সঙ্গে কাপুনি, জ্বর ১০৩ থেকে ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট উঠতে পারে৷
• মাথাব্যথা
• মাংসপেশি এবং গিঁটে প্রচন্ড ব্যথা
• গলা ব্যথা
• খাওয়ায় অরুচি
• বমিবমি ভাব বা বমি হওয়া
• জ্বর শুরু হওয়ার তিন চার দিন পর ত্বকে র‌্যাশ (লাললাল ফুসকুড়ি) বের হয়।
হেমোরেজিক জ্বর
এটি ডেঙ্গুর মারাত্মক অবস্থা। এ ক্ষেত্রে রোগীর ত্বকের নিচে রক্ত জমাট বাধে এবং দেহের বিভিন্ন অঙ্গ যেমন পাকস্থলী ও অন্ত্রে রক্তক্ষরণ ঘটে। এ অবস্থায় রোগীর মৃত্যু ঘটতে পারে।
লক্ষণ
• জ্বর ১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠতে পারে৷
• তীব্র জ্বরের সঙ্গে কাপুনি
• মাথা ব্যথা
• মাংস পেশি এবং গিঁটে প্রচন্ড ব্যথা
• গলা ব্যথা
• খাওয়ায় অরুচি
• রক্ত বমি
• ত্বকে র‌্যাশ (লাললাল ফুসকুড়ি) বের হয়
• নাক দিয়ে রক্ত পড়া
• মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া
• পায়খানার সঙ্গে রক্ত পড়া
• প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত পড়া
• শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে
• রক্তের চাপ কমে যায়
• লসিকা গ্রন্থি ফুলে যায়
• চোখ লাল হয়ে যায়
• নাড়ীর গতি বেড়ে যায়
• রোগীর হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়
• পেটে তীব্র ব্যথা হয়
• রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে

ডেঙ্গু থেকে কী জটিলতা হতে পারে :
• নিউমোনিয়া
• অস্থিমজ্জার স্বাভাবিক ক্রিয়া ব্যাহত হওয়া
• চোখের প্রদাহ
• অন্ডকোষের প্রদাহ
• ডিম্বাশয়ের প্রদাহ
• শক
• রক্তপাত
• রক্তশূন্যতা
প্রতিকার :
রোগীর লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে ৷ রোগীকে বিশ্রামে থাকতে হবে ৷ প্রচুর তরল খাবার খেতে দিতে হবে ৷ ক্ল্যাসিক্যাল ডেঙ্গু সাধারণত ৭ থেকে ১০ দিনে ভালো হয়ে যায় ৷ হেমোরেজিক ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে ৷ ডেঙ্গুজ্বর আক্রান্ত রোগী কে মশারীর মধ্যে রাখতে হবে ৷
প্রতিরোধ :
১. মশার বংশ বিস্তারের স্থান গুলো নির্মূল করবেন কীভাবে ?
• বাড়ির বাইরে গাছের টব ও জলাধার গুলো শুকনো, পানিশূন্য রাখতে হবে ৷ যেসব জিনিসে বৃষ্টি বা বৃষ্টির পানি জমা হয়, যেমন- পুরনো টায়ার, ডাবের খোসা ইত্যাদি বাসার আশে পাশে না ফেলে ডাস্টবিনে ফেলে দিবেন।
• টবে যেন পানি জমে না থাকে, সেদিকে লক্ষ রাখুন
• ফ্রিজের নিচের ট্রেতে যেন পানি জমে না থাকে, সেদিকে লক্ষ রাখুন
• ফুলদানিতে যেন পানি জমে না থাকে, সেদিকে লক্ষ রাখুন
জনস্বাস্থ্য কর্মীরা যাতে স্থির জলাধার, জলাবদ্ধ এলাকা পরিস্কার করে, নির্মাণ স্থলে বা বর্জ্য পানি ট্রিটমেন্টের স্থানে স্থিরজল সরিয়ে যাতে পাড়ার লোকের স্বাস্থ্যের নিরাপত্তা দেন এজন্য সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে।
২. নিজেকে মশার কামড় থেকে রক্ষা করবেন কীভাবে?
• জানালা-দরজায় নেট এবং খাটে মশারি ব্যবহার করুন
• দিনের বেলা মশা তাড়াবার ক্রিম, মশারকয়েল, ভেপর ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।

কীভাবে বুঝবেন ডেঙ্গু হেমোরেজিক (রক্তক্ষরণী) জ্বর
রক্ত পরীক্ষায় যদি অণুচক্রিকাবা প্লেটলেটের সংখ্যা কমে যায়, তাহলে বুঝতে হবে এটি হেমোরেজিক বা রক্ত ক্ষরণী জ্বর। শকে চলে যাওয়া বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, অস্থিরতা, অবসন্নতা, পেটে তীব্রব্যথা, হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, ত্বক কুঁচকে যাওয়া, রক্তচাপ কমে যাওয়া, বেশিবেশি প্রস্রাব হওয়া প্রভৃতি লক্ষণ দেখা দেওয়া মাত্র রোগীকে হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হবে। পুনরায় রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে।
প্রচুর তরল খাওয়াতে হবে। বিশুদ্ধ পানি যথেষ্ট পরিমাণে পান করাতে হবে। সেইসঙ্গে প্রস্রাবের পরিমাণ পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সময়মতো সঠিক ব্যবস্থাপনায় ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বরও সারিয়ে তোলাযায়। বেশি রক্তক্ষরণ হলে ফ্রেশ ফ্রোজেন প্লাজমা কিংবা কনসেনট্রেটেড প্লেটলেট অথবা প্রয়োজনে পূর্ণ রক্ত পরিসঞ্চালনের মাধ্যমে চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।
রোগী কেন মারা যায়
অত্যধিক তাপ মাত্রার জ্বরের জন্য দেহে পানিশূন্যতা দেখা দেয় দ্রুত। কোষের অভ্যন্তরীণ তরল কমে যায়, আশপাশের রক্ত নালিতে চাপ পড়ে, শুরু হয় রক্তক্ষরণ।ইন্টারনাল ব্লিডিং। বেশিমাত্রায় রক্তক্ষরণ চলতে থাকলে অণুচক্রিকা বা প্লেটলেট সংখ্যায় কমে যায়। প্লেটলেট কমে গেলে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে না, ফলে ধীরে ধীরে রক্ত ক্ষরণ আরও বাড়তে থাকে। দেখা দেয় শক সিনড্রম। শরীরের অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। যথাযথ চিকিৎসা-ব্যবস্থাপনার অভাবে রোগীর দ্রুত অবনতি ঘটে।নেমে আসে অবাঞ্ছিত মৃত্যুর অন্ধকার।

রক্তের কোন পরীক্ষা জরুরি
ডেঙ্গু ভাইরাস সনাক্ত করণের, অর্থাৎ জীবাণু পৃথক করণের কোনো পরীক্ষা আমাদের এখানে নেই। রোগের লক্ষণ দেখে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো রক্তে বিশেষ অ্যান্টিবডির উপস্থিতি নির্ণয়ের মাধ্যমে সাধারণত ডেঙ্গু শনাক্ত করা হয়।
তবে এটি কোনো নিশ্চিত পরীক্ষা নয়। সাধারণ জ্বর হলেই এটি করার দরকার নেই, কারণ এটি ব্যয়বহুল পরীক্ষা। সাধারণ জ্বর যদি উচ্চ তাপমাত্রায় (১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি) হয় তাহলে প্রথমেই রক্তের একটি রুটিন পরীক্ষা করে অণুচক্রিকা বা প্লেটলেট কাউন্ট দেখে নেওয়াটা জরুরি। যদি প্লেটলেট বা অণুচক্রিকা সংখ্যায় এক লাখের কম হয় তাহলে পরবর্তী পরীক্ষার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।

চিকিৎসা
বেশিরভাগ ডেঙ্গুজ্বর ই সাত দিনের মধ্যে সেরে যায়, অধিকাংশই ভয়াবহ নয়। প্রয়োজন যথেষ্ট পরিমাণে পানিপান, বিশ্রাম ও প্রচুর তরল খাবার। সঙ্গে জ্বর কমানোর জন্য এসিটামিনোফেন (প্যারাসিটামল) গ্রুপের ওষুধ। সাধারণ ডেঙ্গুর চিকিৎসা এ-ই। তবে ব্যথানাশক ওষুধ হিসেবে এসপিরিন বা ক্লোফেনাক-জাতীয় ওষুধ দেওয়া যাবেনা। এতে রক্তক্ষরণ বেড়ে যেতে পারে। হেমোরেজিক বা রক্তক্ষয়ী ডেঙ্গু, যা খুবই কম হয়ে থাকে, বেশি ভয়াবহ। এতে মৃত্যুও হতে পারে।জ্বর, সঙ্গে রক্তক্ষরণের লক্ষণ দেখামাত্র হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে বিশেষ চিকিৎসার জন্য। জ্বর কমানোর জন্য বারবার গা মোছাতে হবে ভেজা কাপড় দিয়ে।
মশা কখন কামড়ায় ?
ডেঙ্গুমশা, মানে এডিস মশা সকাল-সন্ধ্যায় কামড়ায়। মানেহলো এই, ভোরে সূর্যোদয়ের আধ ঘণ্টার মধ্যে এবং সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের আধঘণ্টা আগে এডিস মশা কামড়াতে পছন্দ করে। তাই এই দুই সময়ে মশার কামড় থেকে সাবধান থাকবে হবে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে থ্রি-‘ভি ’ব্যবস্থাপনা
ডেঙ্গু হবেনা, যদি পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন থাকি, দৈনন্দিন স্বাস্থ্য-অভ্যাস পরিবর্তন করি। ভেক্টর (এডিসমশা), ভিকটিম (রোগী), ভাইরাস (ডেঙ্গুভাইরাস) এই তিন ‘ভি’ডেঙ্গু-ব্যবস্থাপনার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। এডিস মশা ডেঙ্গুর ভেক্টর বা বাহক।কাজেই প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে নিজের ঘর, আঙিনায় মশার উৎস ধ্বংস করুন।ফুলের টব, পুরোনো ক্যান বা পাত্র, গামলা, গাছের কোটরে যাতে চার-পাঁচ দিন পানি জমে না থাকে, ছোট আবদ্ধ জায়গায় যাতে বৃষ্টির পানি জমে না থাকে, সে দিকে খেয়াল রাখুন।নিজেই উদ্যোগী হোন, কারও আশায় বসে থাকবেন না।

ইনফ্লুয়েঞ্জা (ফ্লু)

ইনফ্লুয়েঞ্জা (ফ্লু) এর কারন, লক্ষণ ও চিকিৎসা
ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস এ অথবা বি মানব দেহে এই রোগ করে থাকে।
লক্ষনঃ কাপুনি দিয়ে জর, সমস্ত শরীর ও হাতে পায়ে ব্যথা, তীব্র মাথা ব্যথা, গলা ব্যথা এবং শুকনো কাশি এই রোগের লক্ষন হিসাবে পরিচিত।
পরীক্ষাঃ তেমন কোনো পরীক্ষার প্রয়োজন হয়না তবে সি,এফ,টি পরীক্ষাটি করে অনেক সময় রোগ নির্ণয় করা হয়।
চিকিৎসাঃ বিশ্রাম নেয়া সেই সাথে জর উপশমের জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষুধ খেলে এই রোগ এমনিতেই ভালো হয়ে যায়, তবে সাথে অন্য ইনফেকশন থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এন্টিবায়োটিক সেবন করতে হয়।
জটিলতাঃ এ রোগের জটিলতা হিসাবে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন, নিউমনিয়া সহ অন্যান্য রোগ দেখা দিতে পারে।

ফাইলেরিয়া বা গোদ রোগ

ফাইলেরিয়া বা গোদ রোগের কারন, লক্ষণ ও চিকিৎসা
উচেরেরিয়া ব্যানক্রফটি নামক জীবানু এই রোগের জন্য দায়ী। মূলত কিউলেক্স মশার কামড়ে এই জীবাণু মানুষের শরীরে প্রবেশ করে তবে অ্যানোফেলিস ও এডিস মশার কামড়ে ও এই পরজীবীর জীবাণু মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
লক্ষনঃ প্রথমে অল্প মাত্রার জর সেই সাথে লিম্ফ নালী বরাবর ব্যাথা এবং লাল হয়ে যাওয়া। কিছুদিন পরে আক্রান্ত অঙ্গ ফুলে যায় এবং এটা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে যা এক সময় বিশাল আকৃতি ধারণ করতে পারে। সাধারণত পা, অন্ডকোষ সহ অন্যান্য অঙ্গ ও এতে আক্রান্ত হতে পারে। মেয়েদের ক্ষেত্রে স্তনের চামড়া ফুলে পুরু হয়ে খসখসে হয়ে উঠে। দেখতে হাতির চামড়ার মত মনে হয় বলে গোদ রোগের অন্য নাম এলিফ্যানটিয়াসিস।
পরীক্ষাঃ রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে সরাসরি অথবা লিম্ফ নোড কালচার করে এর জীবানু নিশ্চিত করা যায়।
চিকিৎসাঃ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডাইইথাইল কার্বামাজেপিন নামক ঔষুধ সেবন করতে হয়। ২ বছরের কম শিশুদের ও গর্ভবতী মহিলাদের এই ঔষধ সেবন করা যাবে না।
প্রতিরোধঃ মশা নিধন করতে হবে, ঘুমানোর সময় মশারী ব্যবহার করা উচিত।

ডায়াবেটিস
ডায়াবেটিস একটি মারাত্মক রোগ। কেউ কেউ একে অন্যান্য সকল মারাত্মক রোগের জননী বলে। কাঠের সাথে ঘুণের যে সর্ম্পক, শরীরের সাথে ডায়াবেটিসের সে সম্পর্ক। অর্থাৎ কাঠে ঘুণ ধরলে যেমন এর স্থায়িত্ব নষ্ট হয়ে যায়, তেমনি ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকলে তাড়াতাড়ি শরীর ভেঙ্গে পড়ে। আমাদের হার্ট, কিডনী, চোখ, দাঁত, নার্ভ সিষ্টেম-এ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো সম্পূর্ণ বা আংশিক ধ্বংস হতে পারে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে।
বিজ্ঞানের কল্যাণে প্রতিদিন অনেক অসাধ্য সাধিত হচ্ছে। প্রকৃতির সাথে লড়াই করে বেঁচে থাকার পরিবর্তে আরামে ও আয়াসে কাটছে মানুষের জীবন। কায়িক পরিশ্রমের স্থান দখল করছে মানুষ নির্মিত যন্ত্র। এরই পরো ফল ডায়াবেটিস। আগের দিনে মানুষের কায়িক পরিশ্রম ছিল; সে জন্য ডায়াবেটিসের কথা শুনা যায়নি। শুধু তাই নহে, বিশ্বের ক্রমবর্ধমান বিপুল জনগোষ্ঠির খাদ্য চাহিদা মিটাতে ব্যবহৃত হচ্ছে রাসায়নিক ও জৈবিক প্রযুক্তি। অনেক চিন্তাবিদ মানুষের ডায়াবেটিস সহ বিভিন্ন মারাত্মক রোগ ব্যাধির সাথে এ ধরনের প্রযুক্তির অপব্যবহার এর সম্পর্ক রয়েছে মর্মে চিন্তা শুরু করেছেন। সুতরাং মানব সৃষ্ট প্রযু্ক্তির যথাযথ ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।
স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীরা অনেক বড় বড় রোগের কারণ নির্ণয় করেছেন এবং তদানুসারে ঔষুধও আবিষ্কার করেছেন। ম্যালেরিয়া, কলেরা, গুটি বসন্ত, যক্ষ্মা ইত্যাদি ভয়াবহ রোগগুলোর কারণ আবিষ্কৃত হওয়ায় এ অসুখগুলো নিয়ে মানুষ আর চিন্তিত নয়। ‘হলে যক্ষ্মা, নাই রক্ষা' -এ প্রবচন আজ মানুষ বিষ্মৃত প্রায়। কিন্তু প্রাণান্তকর চেষ্টা ও শত গবেষণা সত্বেও ডায়াবেটিসের প্রকৃত কারণ নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীরা বলছেন যে কোন অজানা কারণে প্যানক্রিয়াসের বেটা সেল (ইবঃধ ঈবষষ) ধ্বংস প্রাপ্ত হয়। এর ফলে ইনসুলিন তৈরিতে প্যানক্রিয়াস সম্পূর্ণ অথবা আংশিক অম হয়ে পড়ে। ইনসুলিনের অভাবের কারণে রক্তের গ্লুকোজ আমাদের শরীরের বিপাক ক্রিয়ায় অংশ নিতে পারে না। এর ফলে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায় এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়।
কাদের ডায়াবেটিস হতে পারে ?
কি কি অবস্থায় ডায়াবেটিস প্রকাশ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে ?
অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থেকে কি ধরনের বিপদ হতে পারে ?
কিভাবে বুঝবেন আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আছে ?
ডায়াবেটিস কি সারানো যায়?

ডায়াবেটিসের চিকিৎসা :
ডায়াবেটিস সম্পূর্ণ সারানো বা নিরাময় করা যায় না। তবে এ রোগ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব এবং এই বিষয়ে ডাক্তার রোগীকে সাহায্য করতে পারেন।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে করণীয়
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চারটি নিয়ম মানতে হয়ঃ
ক) নিয়ন্ত্রিত খাদ্য গ্রহণ
খ) সাধ্যমত কায়িত পরিশ্রম ও ব্যায়াম
গ) ঔষধ
ঘ) শিক্ষা
প্রতিটি পর্যায়ে শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে।
ক) নিয়ন্ত্রিত খাদ্য গ্রহণ -ডায়াবেটিস হলে খাদ্যের একটি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে হয়। খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা ডায়াবেটিস হওয়ার আগে যে রকম থাকে পরেও একই থাকে। পুষ্টির চাহিদার কোন তারতম্য হয় না। খাদ্যের নিয়ম মেনে চলার প্রধান উদ্দেশ্য থাকে:ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা, স্বাস্থ্য ভাল রাখা। ডায়াবেটিস এর জন্য খাদ্যাভাসের পরিবর্তন জরুরী যা বিশেষ ভাবে পালনীয়-
• ডায়াবেটিক রোগীদের খাদ্যাভাস এমনভাবে গড়ে তোলা দরকার যাতে শরীরের ওজন কাম্য সীমার উপরে বা নীচে না যায়।
• খাদ্য তালিকায় ভাত, রুটি ইত্যাদির পরিমান কমিয়ে পরিবর্তে শাকসব্জী বাড়িয়ে দিতে হবে; আঁশযুক্ত সাক শবজী প্রচুর পরিমানে খাওয়া যাবে।
• মিষ্টি জাতীয় খাবার (কেক, পেস্তি, জ্যাম, জেলি, মিষ্টি, ঘনীভূত দুধ, মিষ্টি বিস্কুট, সফট ড্রিক, চায়ে চিনি ইত্যাদি) খাওয়া যাবেনা।
• নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খেতে হবে। ঘি, মাখন, চর্বি, মাংস ইত্যাদি কম খেতে হবে।
• যথা সময়ে ঘুমাতে হবে এবং সকল ধরণের দুশ্চিন্তা হতে মুক্ত থাকতে হবে।
• ধূমপান, মদ পান এবং হোটেলের খাবার পরিপূর্ণভাবে পরিহার করতে হবে।
খ) ব্যায়াম- রোগ নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে ব্যায়াম বা শরীর চর্চার ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

I BUILT MY SITE FOR FREE USING