এক্সিকিউটিভ কি শ্রমিক
ড. উত্তম কুমার দাস, শ্রম আইন বিশেষজ্ঞ এবং এডভোকেট, সুপ্রীম কোর্ট অব বাংলাদেশ।*
গত বছর ডিসেম্বর মাসে (২০১৬) ঢাকায় মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও শ্রম আইনের প্রয়োগ বিষয়ক এক প্যানেল আলোচনায় প্রশ্ন ছিল- একজন এক্সিকিউটিভ শ্রমিক হবেন কি না। ঘটনাচক্রে উপস্থিত আলোচকরা (যাঁদের মধ্যে আইনজীবীও ছিলেন) বিষয়টি এড়িয়ে যান।
বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ (২০১৩ সনের সংশোধনীসহ) শ্রমিকের সংজ্ঞা দিয়েছে।
উক্ত আইনের ২(৬৫) ধারা অনুসারে, শ্রমিক হলেন শিক্ষাধীনসহ কোন ব্যাক্তি, যার চাকরীর শর্তাবলী প্রকাশ্য বা উহ্য যেভাবেই থাকুক না কেন, যিনি কোন প্রতিষ্ঠানে বা শিল্পে মজুরী বা অর্থের বিনিময়ে দক্ষ, অদক্ষ, কায়িক, কারিগরি, ব্যবসা উন্নয়নমূলক অথবা কেরানীগিরির কাজ করার জন্য নিযুক্ত হন। এই ক্ষেত্রে উক্ত শ্রমিক তার নিয়োগকর্তা দ্বারা সরাসরি কিংবা কোন ঠিকাদারের মাধ্যমে নিযুক্ত হতে পারেন। এটি হ’ল আইনের সরল বিবরণ।
তবে, যারা প্রধানতঃ প্রশাসনিক বা ব্যবস্থাপনামূলক কাজে নিযুক্ত থাকেন তাঁরা শ্রমিক হিসেবে গন্য হবেন না।
তবে এটা পরিস্থিতি নির্ভর- সরলী করণ করলে চলবে না। বাংলাদেশ এবং ভারতের উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তে বেরিয়ে এসেছে শ্রমিকের সংজ্ঞার সরল প্রয়োগ করা সহজ নয় এবং উচিতও নয়। বরং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নিয়োগের শর্ত এবং প্রকৃতপক্ষে তিনি কি কি কাজ করেন তাঁর ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে কেউ শ্রমিক কি-না।
সে বিবেচনায় একজন এক্সিকিউটিভেরও শ্রমিক হতে বাঁধা নেই। কারণ পদবী দেখে বিবেচনা করা যাবে না যে কে শ্রমিক বা কে নয়। মুলতঃ তিনি যে যে কাজ করেন তার মূল ধরণ কি তাই বিবেচ্য হবে (৩১ ডিএলআর, পৃষ্ঠা ৩০১)।
কাজের ধরণ থেকে দেখা যায় একজন এক্সিকিউতিভ সাধারণতঃ কারিগরি ও ব্যবসা উন্নয়নমূলক কাজে নিযুক্ত হন।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট থেকে এমন সিদ্ধান্ত রয়েছে (রিট পিটিশন নং ২৩২৩, ১৯৯০)- একটি টেক্সটাইল মিলের ডাইয়িং মাস্টার যিনি ঘটনাচক্রে ঐ (ছোট) কারখানার দ্বিতীয় ব্যক্তি ছিলেন এবং কারখানার ম্যানেজারের অনুপস্থিতিতে তাঁর দ্বায়িত্ব পালন (চেক সইসহ) করতেন, তিনিও শ্রমিক বলে গন্য হয়েছেন- উচ্চ আদালত এমন সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।