07 Oct

“টার্মিনেশন” নিয়ে কথা!
এক ভদ্রলোক ফোনে জানিয়েছেন, তিনি একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। প্রায় সাত বছর। তাঁকে কোন কারণ না দেখিয়ে “টার্মিনেশন” করা হয়েছে। আর তা করা হয়েছে গত সপ্তাহের শেষ কর্ম-দিবসে। কোন আইনি প্রতিকার আছে কি?
উত্তরঃ
প্রাপ্ত বর্ণনানুসারে, এটি একটি বেসরকারী বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান; তাই বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ (২০১৩ সনে সংশোধনীসহ) এবং বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা, ২০১৫ এর বিধান প্রযোজ্য হবে।
শ্রম আইনের ২৬ ধারা অনুসারে, মালিক বা নিয়োগকারী তাঁর অধীনে নিয়োজিত কোন শ্রমিকের (বা কর্মীর) অবসান করতে পারেন। এটি বরখাস্ত করা ছাড়া মালিক কর্তৃক শ্রমিকের চাকরী অবসানের একটি প্রক্রিয়া, যাকে টার্মিনেশন বলা হয়।
এক্ষেত্রে মাসিক মজুরীর ভিত্তিতে নিয়োজিত কোন স্থায়ী শ্রমিকের ক্ষেত্রে ১২০ দিনের নোটিশ এবং অন্যদের ক্ষেত্রে ৬০ দিনের নোটিশ দিতে হবে। তবে এই নোটিশের বদলে নোটিশ-মেয়াদের জন্য প্রযোজ্য মজুরী প্রদান করে তা করা যাবে।
আমাদের এখানকার চর্চা অনুসারে, শ্রম আইনের ২৬ ধারার আওতায় মালিক কর্তৃক তাঁর অধীনস্ত শ্রমিকের চাকরীর অবসান বা টার্মিনেশন সংশ্লিষ্ট মালিকের একচ্ছত্র অধিকার!
তবে এইক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শ্রমিককে কোনরূপ দোষারোপ করা যাবেনা। কোনরূপ দোষারোপ করলে সেই টার্মিনেশন আইনসিদ্ধ হবেনা। আমাদের মাননীয় উচ্চ আদালতের রায়েও এর সমর্থন রয়েছে।
আমাদের অনেকের সাধারণ ধারণা হ’ল – ২৬ ধারার অধীন প্রদত্ত আদেশে চাকরীর অবসান হলে তার বিরুদ্ধে কোন প্রকার অভিযোগ কিংবা তাকে চ্যালেঞ্জ করা যাবেনা। এইক্ষেত্রে কিছু ব্যতিক্রম হ’লঃ এই চাকরীর অবসান সংশ্লিষ্ট শ্রমিকের ট্রেড ইউনিয়ন সংক্রান্ত কাজের জন্য অথবা উদ্দেশ্য-প্রণোদ
িত হলে অথবা ২৬ ধারার অধীন প্রাপ্য সুবিধাদি না পেলে তা চ্যালেঞ্জ করা যাবে [শ্রম আইন ৩৩(৯) ধারা]।
এখানে গুরুত্ব দিয়ে বোঝার বিষয় হ’ল- মালিক কর্তৃক শ্রমিকের চাকরী অবসানের পিছনে কোন উদ্দেশ্য ছিল কি না। সংশ্লিষ্ট ঘটনা ও তার প্রেক্ষাপটে তার বিবেচনা করতে হবে।
প্রাপ্ত অভিযোগে দেখা যায়, কখনও কখনও মালিক “সরলভাবে চাকরী অবসানের” (Termination simpliciter) উদ্যোগ নিলেও তা শিল্প-বিরোধের কারণ হতে পারে। পিছনে অন্য ঘটনা থাকতে পারে।
এ প্রসঙ্গে ভারতের সুপ্রীম কোর্ট এক মামলায় মন্তব্য করেছেন, যদি চাকরী অবসান করে ব্যবস্থাপনাপক্ষ তাঁদের উপর ন্যস্ত ক্ষমতার দম্ভ দেখায় অথবা চাকরীর অবসানটি প্রকৃতপক্ষে কাউকে ক্ষতিগ্রস্থ করার কৌশল অথবা অসৎ শ্রম আচরণের ফল হয়, সেক্ষেত্রে শিল্প/শ্রম-আদালতের হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা থাকবে এবং কথিত চাকরী অবসানের আদেশকে অবৈধ ঘোষণা করতে পারবেন। যদি দেখা যায়, কোন ঘটনায় প্রকৃতপক্ষে অসদাচরণের জন্য কাউকে বরখাস্ত করার বিষয় থাকলেও মালিকপক্ষ সেদিকে না যেয়ে টার্মিনেশন করে চাকরী অবসান করেছে তবে আদালত তাতে হস্তক্ষেপ করবেন [Chartered Bank v. Its Employees’ Union (1960) এবং Tata Oil Mills Company Ltd. v. Workmen এ প্রসঙ্গে ভারতের সুপ্রীম কোর্ট এক মামলায় মন্তব্য করেছেন, যদি চাকরী অবসান করে ব্যবস্থাপনাপক্ষ তাঁদের উপর ন্যস্ত ক্ষমতার দম্ভ দেখায় অথবা চাকরীর অবসানটি প্রকৃতপক্ষে কাউকে ক্ষতিগ্রস্থ করার কৌশল অথবা অসৎ শ্রম আচরণের ফল হয়, সেক্ষেত্রে শিল্প/শ্রম-আদালতের হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা থাকবে এবং কথিত চাকরী অবসানের আদেশকে অবৈধ ঘোষণা করতে পারবেন।

---------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

বাংলাদেশ শ্রম আইনের সবচেয়ে বহুল ব্যবহারিত ধারা হল ধারা-২৬।

কোন মালিক কোন স্থায়ী বা অস্থায়ী কর্মীকে বিনা কারনে চাকুরী থেকে ধারা-২৬ অনুযায়ী অব্যাহতি প্রদান করতে পারেন।

অনেকের ধারনা বাংলাদেশ শ্রম আইন অনুযায়ী খুব সম্ভাবত ৭ শ্রেণির কর্মীদেরকেই টার্মিনেইশন করা যায়।

না, শ্রম আইনের ২৬ ধারা অনুযায়ী শুধুমাত্র স্থায়ী এবং অস্থায়ী এই দুই শ্রেণীর কর্মীদের টার্মিনেইশন করা যায়।

মাসিক ভিত্তিতে মজুরী গ্রহন করেন এমন যেকোন স্থায়ী কর্মীকে টার্মিনেইট করার জন্য ১২০ দিনের নোটিশ প্রদান করতে হবে অথবা ১২০ দিনের মূল মজুরী টাকা প্রদান করতে হবে।

স্থায়ী শ্রমিকের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা সাপ্তাহিক এবং দৈনিক ভিত্তিতে মজুরী গ্রহন করেন।উক্ত স্থায়ী শ্রমিকদেরকে টার্মিনেইট করার জন্য ৬০ দিনের নোটিশ বা ৬০ দিনের মূল মজুরী প্রদান করতে হবে।

অস্থায়ী কর্মীদের মধ্যে যারা মাসিক ভিত্তিতে মজুরী গ্রহন করেন তাদেরকে টার্মিনেইট করার জন্য ৩০ দিনের মূল মজুরী প্রদান করতে হবে অথবা ৩০ দিনের নোটিশ প্রদান করতে হবে।

অস্থায়ী শ্রমিকদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা সাপ্তাহিক এবং দৈনিক ভিত্তিতে মজুরী গ্রহন করেন। তাদেরকে ১৪ দিনের নোটিশ প্রদান করতে হবে অথবা ১৪ দিনের মূল মজুরী প্রদান করতে হবে।

২৬ ধারা অনুযায়ী কোন স্থায়ী কর্মীকে অব্যাহতি প্রদান করলে তাকে ২৬(৪) ধারা অনুযায়ী প্রতি বছর কাজের জন্য এক মাসের মূল মজুরী প্রদান করতে হবে। যা শুধুমাত্র একজন স্থায়ী কর্মী পাবেন এবং ইহা অস্থায়ী কর্মীর জন্য প্রযোজ্য নয়।

শ্রম আইনের ২৬ ধারা অনুযায়ী যদি কোন কর্মীকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়।

তবে তিনি শ্রম আদালতে মামলা করতে পারিবেন না।তবে ৩৩(৯) ধারা অনুযায়ী ৩টি কারনে মামলা করা যাবে।

১। ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের কারনে কেউকে টার্মিনেইট করলে।

২। ২৬ ধারা অনুযায়ী পাওনা পরিশোধ না করতে।

৩। উদ্দেশ্যমূলকভাবে কোন কর্মীকে টার্মিনেইট করলে।

Comments
* The email will not be published on the website.
I BUILT MY SITE FOR FREE USING